মানবতাবিরোধী অপরাধে লিয়াকত ও রজবের মৃত্যুদণ্ড

মানবতাবিরোধী অপরাধে লিয়াকত ও রজবের মৃত্যুদণ্ড

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনাল।

সোমবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনাল ৩১২ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন আদালত।

এসময় ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, জেয়াদ আল মালুম, রানা দাস গুপ্ত, মোখলেছুর রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি, রেজিয়া সুলতানা চমন প্রমুখ। আর আসামিপক্ষে ছিলেন গাজী এমএইচ তামিম।

এর আগে রোববার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

গত ১৬ আগস্ট উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য (সিএভি) অপেক্ষমান রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখাইয়ের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক লিয়াকত আলী ও কিশোরগঞ্জের আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ পায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৮ মে দুই যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব না হওয়ায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। একই বছরের ১ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর প্রসিকিউশন পক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ১৭ জন সাক্ষ্য দেন। আসামিদের পক্ষে কেউ সাক্ষী দেয়নি বলে সমকালকে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। এ মামলায় পলাতক দুই আসামির পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।

তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুসারে, একাত্তরে লিয়াকত মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে ফান্দাউক ইউনিয়নে রাজাকারের দায়িত্বে ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর দেশে আসেন তিনি। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন লিয়াকত। এরআগে ২০১০ সালে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে পালিয়ে যান তিনি।

তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জ অষ্টগ্রাম থানার আলীনগর গ্রামের আমিনুল ইসলাম রজব আলী ১৯৭০ সালে ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় ইসলামী ছাত্র সংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে এলাকায় ফিরে আল বদর বাহিনী গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হয়েছিলেন রজব। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে তিনটি মামলাও হয়েছিল, যাতে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। ১৯৮১ সালে রজব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তিনি ‘আমি আল বদর বলেছি’ নামে একটি বইও প্রকাশ করেন। ওই বইয়ে রজবের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগের আত্মস্বীকৃতি প্রকাশ পায়।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment